চেক লেখার নিয়ম ২০২৩ । MICR চেক লেখার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় বিষয়গুলো দেখে নিন
ব্যাংক হিসাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু ব্যাংক একাউন্টটি যদি আপনার প্রয়োজন না হয় তবে বন্ধ করে রাখাই উত্তম না হলে জমাকৃত অর্থ কেটে ব্যাংক হিসাব খালি হয়ে যাবে – চেক লেখার নিয়ম ২০২৩
চেক বই কেন ব্যবহার করি?– ব্যাংক চেক বই ব্যবহার করে ব্যাংক হিসাব বিনিয়োগের লেনদেন রেকর্ড রাখা হয়। এই বইগুলি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে অধিকৃত ফরমেট এবং নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে প্রদান করা হয়। ব্যাংক চেক বইতে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি থাকে- ১. লেনদেনের তারিখ এবং সময়। ২. লেনদেনের প্রকার যেমন চেক জমা, চেক পরিশোধ ইত্যাদি। ৩. লেনদেনের পরিমাণ কত টাকা এবং কোন মুদ্রায় করা হয়েছে। ৪. লেনদেনের সংশ্লিষ্ট বিবরণ, যেমন পার্টিকুলার কোন লেনদেনের জন্য হল এমন বিবরণ ইত্যাদি। ৫. লেনদেনের বর্ণনা বা স্পষ্টীকরণ এবং লেনদেন সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট পার্টিকুলার নম্বর ইত্যাদি। ৬. চেকের নম্বর এবং চেকের তথ্যগুলি যেমন চেক নম্বর, চেকের মুদ্রা, ব্যাংকের নাম, চেক বই নম্বর ইত্যাদি।
ক্যাশলেস ট্রানজেকশন-সোনালী ব্যাংক সহ অন্যান্য ব্যাংকগুলো ক্যাশলেস ট্রানজেকশনে প্রবেশ করছে এবং ক্রমেই চেক ব্যবহার কমে যাচ্ছে। যাদের ডেবিট কার্ড রয়েছে তারা চেক ব্যবহার করছে না। এছাড়া ব্যাংক ব্যবহার করেও এখন ব্যাংক হতে কিউআর কোড স্ক্যান করেও অর্থ তোলা যায়। টাকা তোলার জন্য এখন ডেবিট কার্ড ও চেকই বই প্রয়োজন পড়ছে না। তবুও আমরা চেক বই ব্যবহার সম্পর্কে জানবো। চেক ব্যবহারের থেকে অ্যাপ ব্যবহার অনেক বেশি নিরাপদ।
ব্যাংক চেক বই হল এমন একটি প্রস্তুতি যা ব্যবহার করে ব্যাংক হিসাব বিনিয়োগের লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এটি কোনও একটি স্ট্যাম্প বা স্ক্রিপ্ট নয়, বরং একটি আইটেমাইজড বই যা সরাসরি সম্পাদন করা হয়। যেমন যদি আপনি একটি চেক জমা দিন, তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি চেক বইতে একটি নতুন এন্ট্রি তৈরি করবে এবং এই এন্ট্রিতে চেক জমার সম্পর্কিত তথ্য যেমন চেক নম্বর, জমার তারিখ, জমার পরিমাণ ইত্যাদি সংরক্ষণ করবে। একটি ব্যক্তি যদি ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে তবে তাকে সাধারণত একটি চেক বই নয় বরং ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়। একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট হল ব্যক্তিগত হিসাবের সমস্ত লেনদেনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা যা সাধারণত মাসের শেষে দেওয়া হয়।
Bank Cheque or Check Writing process / ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম দেখে নিন
ব্যাংক চেক ব্যবহারের নিয়ম কি? হ্যাঁ, ব্যাংক চেক দিয়ে লেনদেন করা যায়। একজন ব্যবহারকারী ব্যাংক চেক দিয়ে কোন টাকা প্রদান করতে পারেন বা কোন টাকা উত্তোলন করতে পারেন। ব্যাংক চেক ব্যবহার করে লেনদেন করার ক্ষেত্রে, লেনদেনের তথ্য চেক বইতে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়াও, যদি আপনি কোন চেক দিয়ে লেনদেন করতে চান, তবে আপনাকে চেকে আবশ্যক তথ্য পূরণ করতে হবে যেমন চেক নম্বর, তারিখ, প্রাপকের নাম ইত্যাদি। এরপর আপনাকে স্বাক্ষর করতে হবে চেকের উপরে এবং চেকটি ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এছাড়াও, ব্যাংক চেক দিয়ে টাকা প্রদান করার ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক প্রাপকের নাম এবং একটি সঠিক চেক নম্বর ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও চেকের উপর স্বাক্ষর করতে হবে। সাধারণত, ব্যাংক চেক দিয়ে কোন লেনদেন করার জন্য আপনাকে ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত একটি চেকের পাতা উপস্থাপন করতে হয়।
চেক লেখার নিয়ম ২০২৩ । নিজের নামে চেক লিখবেন যেভাবে
ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম ২০২৩ । চেক লেখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয়।
- সঠিকভাবে Date বা তারিখ লিখতে হবে: তারিখ বিহীন কোন চেক ব্যাংক গ্রহণ করে না। ব্যাংকের চেকের পাতার মোট ৩ টি অংশ থাকে, ১ম অংশটি মুড়ি, ২য় অংশ মূল চেক এবং শেষ অংশটি হচ্ছে টোকেন। সবগুলো অংশেই শুরুতে তারিখ বসিয়ে নিবেন। বাংলা বা ইংরেজি যেকোন ভাষায় আপনি চেক লিখতে পারবেন। এমআইসিআর চেকে দুইটি অংশ থাকে একটি মুড়ি এবং অন্যটি মূল চেক। এক্ষেত্রে তারিখ লেখার ঘর দেয়া থাকে।
- Pay to – যার নামে চেক হবে: Pay to এর অর্থ হচ্ছে পরিশোধ করুন এবং যার নাম থাকবে তাকে পরিশোধ করুন। আপনি যাকে চেকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করবেন এখানে তার নাম লিখতে হবে। নিজের প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করার ক্ষেত্রে এখানে Self বা নিজ লিখতে পারেন। পাওনাদার বা অন্য কাউকে টাকা দিতে হলে, তার নাম লিখুন। নাম ইংরেজী বা বাংলায় দুটি ভাবেই লিখতে পারেন।
- Amount Taka বা টাকার পরিমাণ লিখতে হবে: টাকা পরিমাণ ছাড়া কোন চেক ব্যাংক গ্রহণ করে না। চেকের মূল অংশে TAKA লেখার অংশে টাকার অংক অবশ্যই কথায় এবং শেষে মাত্র লিখবেন। লেখার শুরুতে ও শেষে খালি জায়গা থাকলে একটি লাইন টেনে দিন। লাইন ঢেউ ঢেউ বা সরল রেখায় হতে পারে। এছাড়া, Tk. লেখা বক্সে অংকে টাকার পরিমাণ লিখুন। টাকার অংকের শেষে /- চিহ্ন ব্যবহার করুন এবং শুরুতে ও শেষে Inverted Comma (কমা) ব্যবহার করুন। যেমন “৩০,০০০/-” টাকা এর ফলে চেকের নিরাপত্তা আরও কঠোর হবে। অন্যকেউ চেকের অংশ মুডিফাই করতে পারবে না।
- Bank Account Holder’s Signature বা একাউন্টধারী স্বাক্ষর থাকতেই হবে: স্বাক্ষর ছাড়া চেকের কোন মূল্য নেই। চেকের ডান পাশে নিচে যেখানে A/C Holder’s Signature থাকে তার উপরে আপনাকে স্বাক্ষর দিতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় স্বাক্ষর কার্ডে যে স্বাক্ষর দিয়েছেন, এখানে সেই স্বাক্ষরটিই দিবেন। লেনদেনের জন্য গ্রাহক যে স্বাক্ষর ব্যবহার করবেন স্বাক্ষর কার্ডে তার ৩টি নমুনা স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়। অনেকে ২/৩টি স্বাক্ষর ব্যবহার করায় অনেক সময় ভুলে যান যে ব্যাংকের জন্য কোন কোন স্বাক্ষরটি ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার ব্যাংকে গিয়ে স্বাক্ষরটি দেখার অনুরোধ করতে পারেন। স্বাক্ষর না মিললে ব্যাংক কোন ভাবেই চেক উপস্থাপনকারীকে টাকা দিবে না।
- Signature at Backside of Cheque বা পেছনের পৃষ্ঠায় অতিরিক্ত স্বাক্ষর দিতে হয়: নিজ অথবা চেক উপস্থাপনকারীর স্বাক্ষর এবং মোবাইল নম্বর দিতে হয়। আপনি নিজের নামের চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে চেকের পেছনে কোন স্বাক্ষর দিতে হয় না। তবে, আপনার নামের চেক দিয়ে অন্য কেউ টাকা উত্তোলন করার অনুমতি দিতে চেকের পিছনে উপর-নিচ করে অতিরিক্ত ২ টি স্বাক্ষর দিবেন। এই অতিরিক্ত স্বাক্ষর দেয়াকে বলা হয় চেকের অনুমোদন। যদি আপনার পাওনাদার বা অন্য কাউকে চেক দিয়ে অর্থ পরিশোধ করেন সেক্ষেত্রেও এই অতিরিক্ত স্বাক্ষর দেয়ার প্রয়োজন নেই। যিনি অর্থ উত্তোলন করবেন তিনিই মূলত স্বাক্ষর দুটি। নমুনা স্বাক্ষর দুটি অবশ্য একই হতে হবে।
চেকে সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র কেন দিতে হয়?
ব্যাংকে চেক উপস্থাপনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি চাওয়া হয়। ব্যাংক হিসাবধারী যদি নিজের চেক নিয়ে না আসেন তবে এটি চাওয়া হয়। তাছাড়া পাওনাদার অন্য কারো নাম দিলে সেক্ষেত্রে তার এনআইডি বা ব্যাংক একাউন্ট অনুসারে নাম লিখা ভাল। ফলে তিনি চেকটি তার যে কোন ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি জমা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন। যদি টাকা সংগ্রহকারীর যদি ঐ ব্রাঞ্চে ব্যাংক হিসাব থাকে তবে এনআইডি না দিয়ে ব্যাংক হিসাব নম্বর চেকে পিছনে লিখে দিলেও তা গ্রহণযোগ্যতা পায়।
চেক লেখার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন কোন ধরণের ভুল ও কাটা-ছেঁড়া না হয়। যদি সঙ্গত কোন কারণে ভুল হয় তবে তা ১ টানে কেটে তার পাশে/ উপরে/ নীচে শুদ্ধভাবে লিখুন এবং সেখানে আপনার (ব্যাংক হিসাব ধারীর) একটি স্বাক্ষর দিতে হবে।