কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ২০২৩ । কৃষি ঋণের সুদের হার কত হবে?

সরকারি খাতের ব্যাংক ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা ও বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বিতরণ করবে – কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ২০২৩

কৃষি ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা কি?কৃষি কাজে নিয়োজিত প্রকৃত কৃষক কৃষি ঋণের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এছাড়া পল্লী অঞ্চলে আয়-উৎসারী কর্মকান্ডে জড়িতরাও সংশ্লিষ্ট খাতে কৃষি ও পল্লী ঋণ সুবিধা পেতে পারেন। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক, বর্গাচাষি এবং অন্যান্য কৃষকদেরকে সহজ পদ্ধতিতে একক/দলবদ্ধভাবে কৃষি ঋণ প্রদান করা যাবে। তবে ঋণখেলাপি কৃষক কৃষি ঋণ পাবার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

১০ টাকা ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে কি? হ্যাঁ। এই নীতিমালার আওতায় শুধুমাত্র শস্য ঋণের জন্য দলবদ্ধভাবে কৃষি ঋণ বিতরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কৃষকদের এলাকা ও আবাদযোগ্য জমি পরিদর্শন করে ৫ থেকে ১৫ জন কৃষকের একটি দল গঠন করবে। তবে কৃষকদের এরূপ দল ইতোমধ্যে বিদ্যমান থাকলে ব্যাংক প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে দল নির্বাচন করতে পারবে। দলের সদস্যদের সাথে আলোচনাক্রমে ব্যাংক একজন দলনেতা এবং একজন উপ-দলনেতা নির্বাচন করবে। কৃষকদলের সকল সদস্য পৃথকভাবে ব্যাংকের নির্দিষ্ট ঋণ আবেদনপত্র (পরিশিষ্ট-‘ঘ’) মোতাবেক শস্য ঋণের আবেদন করবেন। উপ-দলনেতা এবং অন্যান্য সদস্যদের ঋণ আবেদনপত্রে জামিনদার হিসেবে দলনেতা এবং দলনেতার ঋণ আবেদনপত্রে জামিনদার হিসেবে উপ-দলনেতা স্বাক্ষর করবেন।

কৃষি ঋণের গ্যারান্টর কে হবে? কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে গ্রুপ গ্যারান্টি হিসেবে স্ট্যাম্পে (সর্বোচ্চ ৩০০ টাকার) কৃষকদলের সকল সদস্যের স্বাক্ষর নেওয়া যাবে। যে সকল কৃষকের ব্যাংক হিসাব নেই তাদের ১০ টাকার সঞ্চয়ী হিসাব খুলে উক্ত হিসাবের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা’য় উল্লেখিত ঋণ নিয়মাচার ও একর প্রতি ঋণ সীমা অনুসরণ করে ঋণ বিতরণ করতে হবে। জামানত গ্রহণের বিষয়ে নীতিমালার ২.১.১১ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করতে হবে। দলের কোন সদস্য ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে দলের অন্যান্য সদস্য হতে উক্ত ঋণ আদায়/সমন্বয় করা যাবে। কৃষকদের দল গঠন/নির্বাচন, কৃষি ঋণের আবেদনপত্র গ্রহণ, ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম যথাসম্ভব মাঠ পর্যায়ে/কৃষকদলের এলাকায় সম্পন্ন করতে হবে।

কৃষি ঋণ পাওয়ার উপায় কি? । ৪% সুদে কৃষি ঋণ ব্যাংকগুলো পেলেও কৃষক পাবে না । কৃষি ঋণ নীতিমালা ২০২৩-২০২৪

ঋণের আবেদন সহজ করার জন্য আবেদন ফরমের একটি নমুনা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। কৃষকদের উৎসাহ প্রদানের জন্য নমুনা ফরমটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতদ্‌উদ্দেশ্যে কৃষি ঋণের একটি নমুনা আবেদনপত্র ‘পরিশিষ্ট-‘ঘ’ তে সংযোজিত হলো। উক্ত নমুনা অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যাংক কৃষি ঋণের আবেদনপত্র প্রস্তুত করবে।

কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ২০২৩ ।

Caption: Agriculture Loan Rules Download PDF File

কৃষি ঋণের আবেদনপত্র গ্রহণ, প্রাপ্তিস্বীকার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ । কি কি ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে?

  1. ব্যাংক শাখা নির্ধারিত ঋণ নিয়মাচার অনুযায়ী ঋণ আবেদনকারীর বাৎসরিক প্রয়োজনীয় শস্য ঋণ ও এতদ্‌সংক্রান্ত অন্যান্য ঋণ এককালীন মঞ্জুর করবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফসলের মৌসুম শুরুর অন্তত ১৫ দিন পূর্বে ঋণ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা কৃষকদের ফসল উৎপাদনের বাৎসরিক পরিকল্পনাসহ আবেদন গ্রহণ করবে।
  2. প্রয়োজনবোধে পরবর্তীতে কৃষকদের বাৎসরিক উৎপাদন পরিকল্পনায় যুক্তিযুক্ত পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া যাবে। গ্রাহকের আবেদনপত্রের প্রাপ্তি স্বীকার করতে হবে।
  3. আবেদনপত্র পাওয়ার পর ঋণ মঞ্জুরি ও বিতরণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান যৌক্তিকীকরণ এবং গ্রাহকের কোনো অভিযোগ থাকলে তা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। বিশেষ করে শস্য ও ফসলের ঋণ আবেদন দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণ আবেদন সর্বোচ্চ ১০ (দশ) কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
  4. বাতিলকৃত আবেদনপত্র বাতিলের কারণ উল্লেখপূর্বক একটি ফাইলে সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন এবং ব্যাংকের নিজস্ব নিরীক্ষা দলের যাচাইয়ের জন্য ফাইলটি সংরক্ষণ করতে হবে।
  5. কৃষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ টাকা প্রাথমিক জমার বিনিময়ে কৃষকের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে। এ ধরণের হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ২.১.২০ এ উল্লেখিত শর্তসমূহ পরিপালন করতে হবে।
  6. অগ্রাধিকার খাত হিসেবে গ্রাহক পর্যায়ে স্বল্পসুদে ঋণ প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য ব্যাংকসমূহ কর্তৃক সকল প্রকার কৃষি ও পল্লী ঋণে নির্ধারিত সুদ ব্যতীত অন্য কোন প্রকার চার্জ, প্রসেসিং/মনিটরিং ফি ইত্যাদি (যে নামেই অভিহিত করা হউক) ধার্য করা যাবে না।
  7. এছাড়া, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ/পার্টনারশীপের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি কর্তৃক নির্ধারিত ফি/চার্জ ব্যতীত অন্য কোন ফি/চার্জ ধার্য করা যাবে না।
  8. ৫ (পাঁচ) একর পর্যন্ত জমি চাষাবাদের জন্য শস্য ও ফসল ঋণের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ এবং ঋণ মঞ্জুরির ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহ অথবা ব্যাংকের সাথে পার্টনারশীপের ভিত্তিতে ঋণ বিতরণকারী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিম্নলিখিত চার্জ ডকুমেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো চার্জ ডকুমেন্ট গ্রহণ করতে পারবে না।
  9. ডিপি নোট (১০ টাকা থেকে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প/সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক), লেটার অব হাইপোথিকেশন (স্ট্যাম্প প্রয়োজন নেই), লেটার অব গ্যারান্টি ব্যক্তিগত (স্ট্যাম্প প্রয়োজন নেই) মোট এই তিনটি ডকুমেন্ট চাইতে পারবেন।

কৃষি ঋণে সুদের হার কত?

কৃষি ও পল্লী ঋণের খাত/উপখাতে ঋণের সুদ হার ব্যাংকসমূহ নিজেরাই নির্ধারণ করবে। তবে কৃষি খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সুদ হারের সর্বোচ্চ সীমা যথারীতি প্রযোজ্য হবে। প্রসঙ্গত, সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৯ তারিখ:-১৯ জুন ২০২৩ এর নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। ব্যাংক সরাসরি কৃষককে ঋণ বিতরণ করলে গ্রাহক পর্যায়ে এবং এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করলে এমএফআই পর্যায়ে সুদ হারের এই সর্বোচ্চ সীমা প্রযোজ্য হবে। কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ভিত্তিতে অথবা ঋণের মেয়াদান্তে (যে সকল ঋণের মেয়াদ ১২ মাসের অধিক নয়) সরল সুদ হার আরোপ করতে হবে। কৃষক/প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহক (এমএফআই/কন্ট্রাক্ট ফার্ম) পর্যায়ে প্রযোজ্য কৃষি ও পল্লী ঋণের খাত/উপখাতওয়ারী সুদ হার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহ অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে। ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের ক্ষেত্রে এমএফআই/এনজিও কর্তৃক কৃষক পর্যায়ে ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে নমনীয় সুদ হার প্রয়োগ করতে হবে। কৃষি ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করার বিষয়টি বিজ্ঞতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত ২৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি খাতের ব্যাংক ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা ও বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বিতরণ করবে। সূত্র দেখুন

কৃষি ঋণ অবলোপন নীতিমালা ২০২৩ । ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মওকুফে মামলা করতে হবে না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *